মাসুদা আক্তার: বাংলাদেশের সরকারি প্রকল্পগুলোতে জনগণের করের টাকার অপচয় ও স্বচ্ছতার অভাব আজ একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ব্যয়বৃদ্ধি, টেন্ডার কারচুপি ও অর্থের অদক্ষ বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৩০,১৯৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে যা প্রাথমিক অনুমান থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি।
একইভাবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে এত ব্যয়বৃদ্ধির পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ আছে কিনা তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সরকারি ক্রয় নীতিমালা (জিপিপি) থাকলেও অনেক প্রকল্পে সরাসরি ক্রয় (ডাইরেক্ট প্রোকিওরমেন্ট) পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে যা স্বচ্ছতার মানদণ্ডকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে যেখানে নির্দিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প নির্বাহী সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইটে প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য ও ব্যয় বিবরণী প্রকাশ না করায় জনগণের জানার অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে গড়ে ৮০-৮৫% ব্যয় হলেও প্রকৃত অগ্রগতি অনেক ক্ষেত্রে ৫০-৬০% থাকে যা অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে সংশয় তৈরি করে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার মতো আন্তর্জাতিক অর্থসংস্থাগুলো তাদের অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বিশেষ শর্তারোপ করলেও স্থানীয়ভাবে অর্থায়নকৃত প্রকল্পগুলোতে এমন নজরদারির অভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি স্বাধীন মনিটরিং সেল গঠনের দাবি উঠেছে। সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি রোধে ই-গভর্নেন্স সিস্টেম চালু, টেন্ডার প্রক্রিয়ার ডিজিটালাইজেশন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে সিভিল সোসাইটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জনগণের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রকল্প পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।