মোছা: ফাতেমা বেগম: বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের হয়রানি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, এসব অনিয়ম আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে— পুলিশের এ আগ্রাসনের শেষ কোথায়?
দেশে যখনই কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে, দেখা যায়, পুলিশ প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করতে শুরু করে। দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের নির্দেশে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের আটক, মামলা, এমনকি গায়েবি মামলার মতো ঘটনা ঘটানো যেন এখন পুলিশের রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। একই সাথে প্রশাসনের একটি অংশ নিয়মিতভাবে চাঁদাবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে।
একজন দোকানদার বলেন,
“প্রতিদিন থানার লোকজন এসে টুকটাক কিছু দাবি করে, না দিলেই ব্যবসার ওপর চাপ। আমরা কোথায় যাব?”
চাঁদাবাজি ও অনিয়ম যেন এখন ওপেন সিক্রেট।বাস, ট্রাক, মার্কেট, এমনকি রাস্তার ফুটপাত—সবখানে যেন পুলিশের একটি অংশের ‘অঘোষিত কমিশন’ চালু আছে। ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুরু করে থানার অফিসার—সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অর্থ আদায়ে ব্যস্ত।
এছাড়াও দেখা যাচ্ছে, অনেক পুলিশ কর্মকর্তা নিজের ক্ষমতা ও রাজনৈতিক সম্পর্ক ব্যবহার করে স্থানীয় ঠিকাদারি, টেন্ডার ব্যবসা ও জমিজমা দখলের মতো কাজেও জড়িত।এছাড়াও,
নারী ও সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের ঘটনায় ন্যায়বিচারের পরিবর্তে অনেক সময় ভুক্তভোগীকেই হয়রানি করা হয়। নারী নির্যাতনের মামলা থানায় নিতে গড়িমসি, আর কখনো ‘আপস’ নামের ভয়াবহ এক রীতি চাপিয়ে দেওয়া হয়।
জনগণের প্রশ্ন কে দেবে জবাবদিহিতা?
দেশের সাধারণ মানুষ আজ প্রশ্ন করছে—পুলিশ কাকে সেবা দেয়? তারা কি জনগণের, না কি ক্ষমতার রক্ষক?
একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন,
_“আমরা চেয়েছিলাম পুলিশ জনগণের বন্ধু হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা হয়ে উঠেছে জনগণের আতঙ্ক। যতই সরকার বদলাক, পুলিশ তো একই থাকে—লুটপাট আর হয়রানিতে।
পুলিশের হাতে হয়রানি, অনিয়ম ও আগ্রাসন এখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বদলে, অনেক সময় তারা নিজেরাই হয়ে উঠছে ভয়ের কারণ। দেশের এই পরিস্থিতি যদি দ্রুততর নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে জনগণের আস্থা চিরতরে হারিয়ে যাবে।