ইয়াছমিন বেগম: বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল কারণ হিসেবে সরকারের ভুল নীতিকেই দায়ী করা যুক্তিসঙ্গত। আমদানি নীতিতে অবিবেচক সিদ্ধান্ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা এবং রপ্তানি খাতের প্রতি অবহেলা – এসবই আজকের মন্দার পেছনে কাজ করছে। সরকারের অতিমাত্রায় আমদানি নির্ভরতা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা আর্থিক খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। জ্বালানি নীতিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব বিদ্যুৎ সংকটকে তীব্র করেছে। সরকারের রাজস্ব নীতিতে দুর্বলতা কর আদায়ে বিশাল ফাঁক রেখেছে। রেমিট্যান্স আহরণে ব্যর্থতা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে অক্ষমতা অর্থনীতিকে চাপের মুখে ফেলেছে। মুদ্রানীতিতে দোদুল্যমানতা মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালায় স্বচ্ছতার অভাব এবং দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। শিল্পখাতে অদক্ষ নিয়ন্ত্রণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে ধীরগতি বিনিয়োগের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নীতি নির্ধারণে রাজনৈতিক বিবেচনা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকে অকার্যকর করে তুলেছে। সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় গবেষণা ও তথ্য ভিত্তিক সিদ্ধান্তের অভাব লক্ষণীয়। কৃষিখাতে ভর্তুকি কমানো এবং কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। শ্রমবাজারে নীতিগত দুর্বলতা বেকারত্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা বিভিন্ন খাতের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করেছে। বিদেশি ঋণ নির্ভরতা বৃদ্ধি এবং এর সুষ্ঠু ব্যবহারে ব্যর্থতা অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা এবং রাজনৈতিক স্বার্থপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক সংকটকে গভীর করেছে। সরকারের অর্থনৈতিক দর্শনে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তার অভাব এবং তাৎক্ষণিক সাফল্যের প্রতি মোহ সংকট মোকাবিলার ক্ষমতাকে সীমিত করেছে।
অর্থনৈতিক মন্দার দায়ভার: সরকারের ভুল নীতির ফলাফল?
