ইয়াছমিন বেগম: সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ওসি সাজ্জাদ খান ভারতীয় চোরাই মাল পাচারে সহায়তা করার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে এবং অভিযুক্ত ওসি সাজ্জাদ খানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে গোয়াইনঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পণ্য পাচারের ঘটনা বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, থানার ওসি ও কিছু পুলিশ সদস্য চোরাই মাল পাচারে সহায়তা করছেন। তারা পাচারকারীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে তাদের নির্বিঘ্নে পাচার করতে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা পুলিশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানান। তারা বলেছেন, পাচারকারীরা পুলিশের সহায়তায় সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই মাল বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। এতে স্থানীয় বাজার ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন অভিযুক্ত ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে প্রাথমিকভাবে ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওসি ছাড়াও আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য এ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন। তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, পুলিশের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। কিন্তু তারা যদি অবৈধ কাজে জড়িত হন, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক এবং পাচার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওসির বিরুদ্ধে শুধু বরখাস্তই নয়, আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তারা বলেছে, পুলিশ বাহিনীতে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, সীমান্ত এলাকায় পাচার রোধে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।
এদিকে, এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, পাচার রোধে সরকার ও প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, পুলিশের মতো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা যদি অবৈধ কাজে জড়িত হন, তাহলে তা সমাজে আস্থা ও নিরাপত্তা বিনষ্ট করে। তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, পাচার ও দুর্নীতি বন্ধে সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
পুলিশ প্রশাসন আশা প্রকাশ করেছে, দ্রুতই তদন্ত শেষ করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। তবে অভিযুক্ত ওসি ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
এই ঘটনা পুলিশের জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি রোধের প্রশ্নে আবারও সমাজকে ভাবিয়ে তুলেছে। আশা করা যায়, দ্রুতই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।