জনি আক্তার মনি: ‘মব জাস্টিস’ এখন নতুন এক আতঙ্কের নাম। সংঘবদ্ধ কিছু মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার প্রবণতাকে অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় ‘মব জাস্টিস’ বলা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই মব জাস্টিসের নামে কাউকে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। যখন-তখন কারও বাড়িতে ঢুকে লুটপাট করা হচ্ছে। কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। কোথাও আবার কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনিক কাউকে জুতার মালা পরিয়ে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। বেড়েছে দলবদ্ধ হয়ে বিচারবহির্ভূতভাবে কাউকে হত্যা করার ঘটনাও। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছেন রাজনীতিবিদ, পুলিশ, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক থেকে শুরু করে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সর্বত্র এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক এবং দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক পাড়ায়-মহল্লায় টহল বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর বিগত কয়েক মাসে মব জাস্টিসের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ঘটা এ ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। ক্রমাগত হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের কারণে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম না হলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। এভাবে মব জাস্টিস বেড়ে যাওয়ার পিছনে বিগত সরকারের কর্তৃত্ববাদী শাসন বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। গত দেড় দশকে জনমানসে যে ব্যাপক মাত্রার ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, বর্তমানের ঘটনাগুলো এরই বহিঃপ্রকাশ।
তাদের আরও অভিমত-তবে বাংলাদেশে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আগেও দেখা গেছে। তবে সেটা কথিত চোর-ডাকাতকে পিটুনি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবার পুলিশ, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা কর্মকর্তাদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা, মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া, আদালত এলাকায় আসামিদের ওপর হামলা, আবার কোথাও কোথাও পিটিয়ে, কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও হামলা এবং ভাঙচুর হয়েছে ভাস্কর্য, মাজার, স্থাপনা ও শিল্প-কারখানায়। এ ধরনের ঘটনা ছাত্র-জনতার গোটা গণ-অভ্যুত্থানকেই ব্যর্থ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বরং বেড়েই চলছে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার লাগামহীন সংস্কৃতি। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে গুলশানের একটি বাসায় তল্লাশির নামে তছনছ, ভাঙচুর এবং লুটপাট চালানো হয়। ওই বাসায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসররা লুকিয়ে আছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতে দরজা ভেঙে বেশ কয়েকজন লোক ঢুকে পড়ে। তল্লাশির অজুহাতে বাসাটিতে তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় তারা। প্রথমে বলা হয়, বাসাটি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের। পরে জানা গেছে, বাড়িটি তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর। স্বামীর সঙ্গে ২৭ বছর আগে বিচ্ছেদের পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। যদিও এ ঘটনায় পরে ৩ জনকে আটক করা হয়।